প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: ' সয়াবিন ও পেঁয়াজের পর এখন গমের বাজারে 'দামের আগুন'। ভারত থেকে গম রপ্তানি বন্ধ- এ ছুতায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে সাত দিনের ব্যবধানে গমের দাম বেড়েছে মণে ২০০ টাকা। এর প্রভাবে বাড়ছে আটা ও ময়দার দামও। অথচ প্রতিবছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ গমের চাহিদা থাকে, তার কাছাকাছি গম এরই মধ্যে এসে গেছে দেশে। প্রতি মাসে দেশে গমের চাহিদা থাকে গড়ে ৬ লাখ টন। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস হিসাব করলে এই চাহিদা দাঁড়ায় সাড়ে ৬২ লাখ টন। এই চাহিদার বিপরীতে এরই মধ্যে গম এসে গেছে সাড়ে ৫৬ লাখ টন। পাইপলাইনে আছে আরও ৬ লাখ টন গম। তবুও গমের বাজার গরম।'
* চট্টগ্রাম বন্দরে গত শনিবারও ৫২ হাজার টন গম নিয়ে এসেছে একটি জাহাজ। ৫০ হাজার টন সরকারি গম নিয়ে আরেকটি জাহাজ এসেছে গত সপ্তাহে। সরকারি ১ লাখ টন গম নিয়ে আরও দুটি জাহাজ আসবে আগামী মাসে। এভাবে একের পর এক জাহাজ এলেও পর্যাপ্ত নেই গমের মজুত। এ ছাড়া প্রতি মাসে গড়ে ১ লাখ টন গম দেশেই উৎপাদন হয়। এটি হিসাবে নিলে এখন গমের কোনো ঘাটতিই থাকার কথা নয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এত গম যাচ্ছে কোথায়?
* চালের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। দেশে বছরে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টন গম উৎপাদন হয় দেশে। বাকিটা আমদানি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম দেশে এসেছে।
* চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলমও মনে করেন গম নিয়ে তেমন কোনো সংকট হবে না। তিনি বলেন, 'অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পর্যাপ্ত গম আমদানি হয়েছে। ভারত রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিলেও সেটা সাময়িক সময়ের জন্য। সরকারিভাবে ভারত থেকে গম আনতে বাধা নেই। বেসরকারি পর্যায়ে যারা চুক্তি করে ফেলেছেন, প্রয়োজনে তাঁদের ব্যাপারেও ভারতের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এখন ডলারের দামটা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'
' খাদ্য বিভাগ চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, 'এ মাসেই ১ লাখ ২ হাজার টন গম নিয়ে দুটি জাহাজ এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে একটি জাহাজ ১৬ মে নোঙর করেছে। আমরা এটির নমুনা ল্যাবে পরীক্ষা করার পর খালাস প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আরও একটি জাহাজ শনিবার বন্দরে নোঙর করেছে। এ দুই জাহাজে ১ লাখ ২ হাজার টন গম রয়েছে। ১ লাখ টন গম নিয়ে আরও দুটি জাহাজ আসবে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে।'
/ এখন গমের বাজারে 'দামের আগুন' /
* গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর দেশ দুটি থেকে বাংলাদেশে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানি বাড়াতে থাকেন। গত ১ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টন গম আমদানি হয়। এ সময়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে কোনো গম আসেনি। আগে প্রধান দুই আমদানিকারক দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থাকলেও যুদ্ধের পর সেই স্থান দখল করে ভারত। পাশের এই দেশ থেকে আগের অর্থবছরে মাত্র ১৭ শতাংশ গম আনা হলেও গত তিন মাসে বাংলাদেশে আসা গমের ৬৩ শতাংশই তাদের। বাকিটা এসেছে কানাডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য দেশ থেকে।
' ৫০ হাজার টন গম নিয়ে ১৬ মে ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় জাহাজ 'ইমানুয়েল সি'। এই জাহাজ থেকে গম খালাস করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৫২ হাজার টন গম নিয়ে আরও একটি জাহাজ শনিবার এসেছে। এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে গম আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন। নতুন আসা জাহাজের গম যুক্ত হলে সংগ্রহ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন। এবার সরকারিভাবে গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রাও ছিল সাড়ে ৬ লাখ টন। পাইপলাইনে আছে আরও প্রায় ১ লাখ টন গম। চুক্তি অনুযায়ী, এসব গম এলে কোনো সংকট থাকবে না।'
* দেশে গমের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী এর আগে ২৪খবর বিডিকে বলেছিলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার আগে ঋণপত্র খোলা হয়েছে- এমন গম আসতে বাধা নেই। ভারতীয় সরবরাহকারীদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীদের চুক্তি করা হয়েছে, এমন গমের পরিমাণ আনুমানিক ৫ লাখ টন হতে পারে। এসব গম যাতে দেশে আনা যায়, সে ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আবার তৃতীয় দেশ হয়ে রাশিয়া গম রপ্তানি করছে। এটিরও সুযোগ নিতে হবে। ব্যাংকগুলো এখন রাশিয়ায় উৎপাদিত গম আমদানির ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিচ্ছে না। এ জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। তা হলে যা ঘাটতি আছে, তা আবার পূরণ হয়ে যাবে দ্রুত।